Friday, 12 June 2020

বিষ্ণুপুরঃ ক্যাপশন স্টোরি (প্রথম পর্ব)

বছর চারেক আগের কথা। পুজোয় বেড়ানোর প্রোগ্রাম তো প্রতিবারই থাকে। সেইবছরও ছিল। ভাইজাগ-আরাকু ভ্যালির টিকিট কাটা। কিন্তু কলেজে ন্যাক ভিজিটের কারণে পুজোর ছুটি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল। তাই বাধ্য হয়ে টিকিট ক্যানসেল করতে হল। কিন্তু তাই বলে পুজোর বেড়ানোটা একেবারে বাদ যাবে, তা তো হতে দেওয়া যায় না। তাই নাকের বদলে নরুণের মত মুকুটমণিপুর আর বিষ্ণুপুর। অবশ্যি গিয়ে বুঝলাম নরুণটাও ফেলনা নয়। এমন নরুণ পেলে নাক ত্যাগ করতে খুব বেশি কষ্ট হবে না। যাওয়ার সময় আমরা হুল এক্সপ্রেসে গিয়ে নামলাম দুর্গাপুরে। সেখান থেকে বাসে মুকুটমণিপুর। দুদিন কাটিয়ে গাড়ি ভাড়া করে এলাম বিষ্ণুপুর। রাজ্য পর্যটন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজে বুকিং ছিল। বিকেলের দিকে লজ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাসমঞ্চের দিকে যেতেই গাইড মিঠু ভুঁই মশাই পাকড়াও করলেন। সেদিন এবং তার পরের দিন তাঁর সঙ্গে টোটো করে ঘুরে বেড়ালাম বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাসের আনাচ কানাচ দিয়ে।


মৃণ্ময়ী মন্দির

মৃণ্ময়ী মন্দির, বিষ্ণুপুর
আজকের বিষ্ণুপুর, সেদিনের ছিল অতীতের মল্লভূম রাজ্যের রাজধানী। কেউ কেউ বলেন মল্লরাজারা রাজপুতানা থেকে এসেছিলেন। আমাদের গাইডও তাই বললেন। আবার কিছু ঐতিহাসিকের মতে মল্লরাজারা স্থানীয় আদিবাসীদের বংশধর ছিলেন। 

মৃণ্ময়ী মন্দির, বিষ্ণুপুর
মল্লরাজ জগৎমল্ল মৃণ্ময়ী অর্থাৎ দুর্গার মন্দিরটি তৈরী করেন ৯৯৭ সালে। বৈষ্ণব হওয়ার আগে মল্লরাজারা শিব ও শক্তির উপাসক ছিলেন। এখনো রাজপরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে দুর্গাপুজো হয় এখানে। 


মল্লেশ্বর মন্দির

মল্লেশ্বর মন্দির
মল্লেশ্বর মানে শিব। মল্লরাজা বীরহাম্বির এটার নির্মাণকার্য শুরু করেন। আচার্য শ্রীনিবাস গোস্বামীর কাছে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখেন। পরে বীরসিংহ সম্পূর্ণ করেন। নির্মাণকাল আনুমানিক ১৬২২।

গাজনের মেলায় এগুলোয় চড়ে খেলা দেখানো হয়। মল্লেশ্বর মন্দিরের ভিতরেই রাখা আছে।

 অভিনেতা অভি ভট্টাচার্যের বাড়ি ও নাটমন্দির। মল্লেশ্বর মন্দিরের পাশেই।


শ্রীনিবাস গোস্বামীর সমাধি


ষোড়শ শতকে বৃন্দাবনের গোস্বামীরা গরুর গাড়িতে করে অনেকগুলো বৈষ্ণব পুঁথি পাঠাচ্ছিলেন। পথে মল্লভূমের গোপালপুর গ্রামে বইগুলো লুঠ হয়। লুন্ঠিত গ্রন্থের মধ্যে কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত"র আসল পাণ্ডুলিপিও ছিল বলে শোনা যায়। গাড়িতে ধনরত্ন আছে মনে করে রাজা বীরহাম্বিরই ওগুলো লুঠ করিয়েছিলেন। বইগুলোর সন্ধানে রাজসভায় উপস্থিত হয়ে শ্রীনিবাস আচার্য দেখলেন এক পণ্ডিত পুঁথিগুলো পাঠ করছেন এবং ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তখন শ্রীনিবাস আচার্য এগিয়ে আসেন এবং সঠিক ব্যাখ্যা করে বীরহাম্বিরকে আকৃষ্ট করেন। তারপর এই শ্রীনিবাস আচার্যর কাছেই বীরহাম্বির বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হন।


শ্রীনিবাস গোস্বামীর সমাধি, বিষ্ণুপুর


রাসমঞ্চ 

রাসমঞ্চ, বিষ্ণুপুর

বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর বীর হাম্বির এই রাসমঞ্চটি প্রতিষ্ঠা করেন ১৬০০ সালে। তলায় মাকড়া পাথরের বর্গাকার বেদী। ওপরের স্থাপত্য ইঁটের। সৌধের চূড়াটা মিশরের পিরামিডের মত, মাঝে বাংলার চালা আর তলায় ইসলামিক স্থাপত্যের খিলান।

রাসমঞ্চ, বিষ্ণুপুররাসমঞ্চ, বিষ্ণুপুর

রাসমঞ্চে মোট ১০৮টা খিলান আছে। রাস উৎসবের সময় বিভিন্ন মন্দির থেকে বিগ্রহগুলোকে নিয়ে আসা হত।
  
 রাসমঞ্চের দেওয়ালের ভাস্কর্য। বাঁদিকে চৈতন্য মহাপ্রভু কে দেখা যাচ্ছে।

খিলানের মাথায় প্রস্ফুটিত পদ্মের মত ছবি।


শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দির

শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দির, বিষ্ণুপুর

রত্ন অর্থে চূড়া। বাঁকানো চারচালা বাংলাঘরের ওপর চারকোণে চারটে দেউল। মাঝখানে একটা ছয়চালাবিশিষ্ট দেউলের ওপর একটা গম্বুজ। আমাদের গাইড বললেন চারটে ছোট দেউল যথাক্রমে বাংলার চালাঘর, উড়িষ্যার মন্দির, বৌদ্ধ ও জৈন স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত। আর মাঝখানের গম্বুজটায় তো ইসলামিক স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট।মন্দিরের প্রবেশপথের ঠিক ওপরে খোদাই করা আছেঃ 
"শ্রীরাধাকৃষ্ণমুদে শশাঙ্ক বেদাঙ্ক যুক্তে নবরত্নম,
 শ্রীবীরহম্বীর নরেশ সূনুর্দদৌ নৃপঃ শ্রী রঘুনাথ সিংহ।। 
মল্ল সকে ৯৪৯। শ্রীরাজা বীরসিংহ।" 
অর্থাৎ রাধাকৃষ্ণের আনন্দের জন্য নরেশ বীর হাম্বীরের পুত্র রঘুনাথ সিংহ এই মন্দিরটি দান করলেন ৯৪৯ মল্লাব্দে (১৬৪৩ খৃষ্টাব্দে)। ৬৯৪ সালে আদি মল্লের সিংহাসনারোহণের সময় থেকে মল্লাব্দের শুরু।

শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দির, বিষ্ণুপুর
বিষ্ণুপুরের যে সমস্ত মন্দিরে টেরাকোটার কাজ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দির।

শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দির, বিষ্ণুপুর
রাজস্থানী স্থাপত্যের অনুকরণে নকল দরজা।

শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দির, বিষ্ণুপুর
রাম রাবণের যুদ্ধ।

শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দির, বিষ্ণুপুর
কৃষ্ণের রাসলীলা।

রাসচক্র।


জোড়বাংলা মন্দির 

জোড়বাংলা মন্দির, বিষ্ণুপুর
জোড়বাংলা বা কেষ্ট রায় মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ১৬৫৫ সালে, মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহের সময়ে। দুটো দোচালা বাংলা ঘর জুড়ে তৈরী হয়েছে বলে এর নাম জোড়বাংলা। মাঝখানে একটা চারচালার চূড়া।

জোড়বাংলা মন্দির, বিষ্ণুপুর
ভীস্মের শরশয্যা।

জোড়বাংলা মন্দির, বিষ্ণুপুর
ওপরে পশুপালকদের গরু, ছাগল চড়ানোর দৃশ্য। মাঝে বালি-সুগ্রীবের যুদ্ধ; রামচন্দ্র পেছন থেকে অন্যায় যুদ্ধে বালিকে হত্যা করছে। তলায় একজন মানুষ বাঘ শিকার করছে।

জোড়বাংলা মন্দির, বিষ্ণুপুর
ওপরে ঘরোয়া জীবনযাত্রার ছবি। মাঝখানে মোগল সম্রাট পায়রা ওড়াচ্ছেন। তলায় হাতি, ঘোড়া, উটের পিঠে চেপে যুদ্ধযাত্রায় বেরোচ্ছে মোগল সেনা

জোড়বাংলা মন্দির, বিষ্ণুপুর
সুজাতা বুদ্ধদেবকে পায়েস খাওয়াচ্ছে।

জোড়বাংলা মন্দির, বিষ্ণুপুর
যুদ্ধ, শিকার, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি, রামায়ণ-মহাভারতের গল্প - সবই রয়েছে জোড়বাংলা মন্দিরের দেওয়ালে। কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেকগুলোই টিকে আছে।

জোড়বাংলা মন্দির, বিষ্ণুপুর
কৃষ্ণের মন্দিরে ইসলামিক স্থাপত্য।
 

লালজী মন্দির

লালজী মন্দির, বিষ্ণুপুর
রাধা ও কৃষ্ণকে আনন্দ দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় বীরসিংহ ১৬৫৮ সালে এই একরত্ন মন্দিরটি প্রস্তুত করেন। মূলত রাজপরিবারের মহিলারা এখানে পুজো দিতে আসতেন। মন্দিরের সঙ্গে নাটমঞ্চ ও ভোগ রান্নার ঘর রয়েছে।

লালজী মন্দিরের পাশের এই মাঠটায় চৈত্র সংক্রান্তিতে গাজনের মেলা বসে। এখন অবশ্য ক্রিকেট খেলা চলছে।

বড় পাথর দরজা 

বড় পাথর দরজা, বিষ্ণুপুর
বিষ্ণুপুরের প্রাচীন দুর্গের উত্তরদিকের প্রবেশপথ হল মাকড়া পাথরের তৈরী বড় দরজাটা। বীরসিংহ সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগে এটা তৈরী করেন। দরজার সামনে একটা পরিখা রয়েছে।

বড় পাথর দরজা, বিষ্ণুপুর
বড় পাথর দরজার তোরণের প্রবেশপথের দুপাশে সৈন্যদের লুকিয়ে থাকার জায়গা রয়েছে। তলায় ছোট ছোট গর্ত দিয়ে শত্রুর দিকে তীর বা গুলি ছোঁড়া হত।


মদনমোহন মন্দির 

মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
দুর্জন সিংহর আমলে ১৬৯৪ সালে এই একরত্ন ইঁটের মদনমোহন মন্দির তৈরী হয়েছিল। এখনও রাস ও দোল খেলা হয় এখানে।নিত্যসেবাও হয়ে থাকে। ভোগ রান্নার ঘরে রান্নার কাঠও দেখতে পেলাম।
 
মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
মদনমোহন মন্দিরের নাটমঞ্চ


 মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর  
অষ্টধাতুর কৃষ্ণ আর কষ্টিপাথরের রাধা। এই মূর্তিটাকে নিয়ে একটা রোমাঞ্চকর গল্প আছে। সেটা নিয়ে এক্কবার জমিয়ে লিখেছিলাম। আগ্রহ থাকলে এখানে পড়তে পারেনঃ মদনমোহনের কীর্তিকলাপ। 

মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
বিষ্ণূপুরের মন্দিরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো পোড়ামাটির কাজ রয়েছে মদনমোহন মন্দিরে।

মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
নব নারী কুঞ্জর। ন জন মহিলা মিলে একটা হাতির রূপ তৈরী করেছে। এই ন জন নারী হল রাধা ও তার অষ্টসখী। কৃষ্ণের সঙ্গে ছল করে তাকে পিঠে নিয়ে জঙ্গলে ঘোরার জন্য রাধা সখীদের নিয়ে এই কাণ্ডটা করেছিলেন। দাশরথি রায়ের পাঁচালীতে আছেঃ
তোমরা ত অষ্টসখী, আমি এক জন । 
নয় জনে একত্রেতে হইব মিলন ॥
নব নারী মিলে হব অপূৰ্ব্ব কুঞ্জর।
কুঞ্জর রূপেতে রব কুঞ্জের ভিতর ॥
করী -রূপে প্রাণকান্তে পৃষ্ঠেতে করিয়া
ব্রজের বিপিন মাঝে বেড়াব ভ্ৰমিয়া ॥
মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
চীনা ড্রাগনের অনুকরণে স্থাপত্য।

মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
বালী ও সুগ্রীবের যুদ্ধের বিভিন্ন মুহূর্ত। তলায় দেখা যাচ্ছে ঘাপটি মেরে বসে আছে রামচন্দ্র। সুযোগ বুঝে পেছন থেকে তীর মারছে।

মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
নৃসিংহ অবতারে হিরণ্যকশিপুকে বধ করছে বিষ্ণু।

মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর
বিষ্ণুর বরাহ অবতার। দশ অবতারেরই ছবি পাওয়া যাবে এই মন্দিরের দেয়ালে।

মদনমোহন মন্দিরের সামনে পোড়ামাটির জিনিসের পসরা। বাজারের চেয়ে এখানেই সস্তায় পাওয়া যাবে।

 

মুরলীমোহন মন্দির 

মাকড়া পাথরনির্মিত মুরলীমোহন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বীরসিংহের রাণী শিরোমণিদেবী। অন্য মন্দিরগুলোর থেকে এই মন্দিরটা একটু দূরে অবস্থিত। এটা খুঁজে পেতে গাইড আর টোটোচালকমশাই বেশ নাজেহাল হলেন।  

দলমাদল

দলমাদল, বিষ্ণুপুর
৪ মিটার দীর্ঘ, ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাস ও ৩০০ মন ওজন বিশিষ্ট এই কামানটা আগে বসানো ছিল বড় পাথর দরজার সামনে। ১৭৪২ সালে ভাস্কর রাওয়ের নেতৃত্বে মারাঠারা হামলা চালালে এই কামান থেকে গোলা বর্ষণ করে বর্গীদের দলকে মর্দন করা হয়। লোকের বিশ্বাস নগরপ্রাকারে দাঁড়িয়ে কামান দেগেছিলেন স্বয়ং মদনমোহন! দল মর্দন থেকে অপভ্রংশ হয়ে দলমাদল নামটা দাঁরিয়েছে।

লালবাঁধ

 
বাঁধ অর্থে তিনদিকে ঘেরা জলাশয়। একদিক ঢালু করা থাকে। সেখান দিয়ে জল এসে জলাশয়ে জমা হয়। বিষ্ণুপুরে অনেকগুলো বাঁধ আছে তার মধ্যে লালবাঁধ বিশিষ্ট অষ্টাদশ শতকের একটা মর্মান্তিক ঘটনার জন্য। পাঠান সর্দার রহিম খাঁর মহল থেকে লালবাঈকে তুলে নিয়ে আসেন মল্লরাজা দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহ। লালবাঈএর থাকার জন্য যে নতুনমহল তিনি তৈরী করে দিয়েছিলেন তার ধ্বংসাবশেষও গাইডমশাই আমাদের দেখালেন। লালবাঈএর গর্ভে দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহের এক পুত্রসন্তানও জন্মগ্রহণ করে। লালবাঈ ও তার পুত্র রাজত্বের দখল নিয়ে নেবে এই আশঙ্কায় রাজার প্রথমা স্ত্রী চন্দ্রভামা দেবী প্রথমে রাজাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেন, তারপর লালবাঈ ও তার পুত্রকে একটা নৌকোয় বেঁধে তার ওপর বড় বড় পাথর চাপিয়ে এই জলাশয়ে ডুবিয়ে মারেন। চন্দ্রভামা দেবী নিজে অবশ্য রাজত্ব ভোগ করতে পারেননি। রাজার চিতায় তাঁকে সহমরণে যেতে হয়।

রাধাশ্যাম মন্দির

রাধেশ্যাম মন্দির, বিষ্ণুপুর
১৭৫৮ সালে মাকড়া পাথর নির্মিত এই গম্বুজাকৃতি একরত্ন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ। এই মন্দিরে রাধাশ্যাম, জগন্নাথ ও গৌর নিতাই ের মূর্তি আছে। তুলসীমঞ্চ, নাটমঞ্চ, ভোগ রান্নার ঘর, প্রবেশপথে নহবৎখনা ্ররয়েছে।
 
রাধেশ্যাম মন্দির, বিষ্ণুপুর
মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ইঁটের নহবৎখানা। একসময় এখানে সানাই ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো হত।

রাধেশ্যাম মন্দির, বিষ্ণুপুর 
ভোগ রান্নার ঘর।

রাধেশ্যাম মন্দির, বিষ্ণুপুর
পঙ্খের কাজে ফুটে উঠেছে নানা পৌরাণিক কাহিনী।

রাধেশ্যাম মন্দির, বিষ্ণুপুর
গৌর-নিতাইএর এই মূর্তিদুটো আগে মহাপ্রভু মন্দিরে ছিল। সংরক্ষণের অভাবে সেটার ভগ্নপ্রায় দশা। তাই গৌর নিতাই ঠাঁই নিয়েছেন এই মন্দিরে।


গুমঘর 

গুমঘর, বিষ্ণুপুর
মল্লরাজা বীরসিংহ এই ইঁটের ঘরটি বানিয়েছিলেন। কারো মতে এটা রাজা দের শস্যাগার ছিল আবার কেউ বলেন এর ওপর থেকে ফেলে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হত। ঐতিহাসিকরা অনেকে মনে করেন এটা জলের ট্যাঙ্ক ছিল, কারণ আশেপাশে অনেক পোড়ামাটির পাইপ পাওয়া গিয়েছিল।


পাথরের রথ 

পাথরের রথ, বিষ্ণুপুর

আনুমানিক সপ্তদশ শতকে মাকড়া পাথর নির্মিত মাটিতে গাঁথা এই রথ কি কাজে লাগত বোঝা গেল না। এটার তলার অংশটা রাসমঞ্চের মত আর ওপরটা বিষ্ণুপুরের মন্দিরের মত। চার ধারে তিনটে করে পাথরের চাকা দেখা যাচ্ছে। 


ছবিগুলো সবই আমার বা শ্রীরূপার তোলা। খালি শ্যামরায় পঞ্চরত্ন মন্দিরের সামনে দুজনের ছবিটা তুলে দিয়েছেন গাইড মহাশয়। সঙ্গের তথ্যগুলো মূলতঃ গাইড মশাই এর কাছ থেকে শোনা বা বিষ্ণুপুর গাইড বুক এবং মন্দির চত্বরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের সাইনবোর্ড এ পড়া। এছাড়া বিনয় ঘোষের "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি (প্রথম খণ্ড)" এবং "পশ্চিমবঙ্গ" পত্রিকার বাঁকুড়া জেলা সংখ্যার সাহায্য ও নিয়েছি। সরকারী গাইড মিঠু ভুঁই এর যোগাযোগ নম্বরঃ 9474452992

Thursday, 4 June 2020

রাম শ্যাম যদু মধু

রোববার সকালেতে রামবাবু ভাবে, 
সারাদিন শুয়ে বসে কষে ল্যাদ খাবে;
গিন্নীর চিৎকার,
উঠে পড়ো এইবার,
চটপট চা-টা খেয়ে বাজারেতে যাবে৷৷



বদরাগী শ্যামবাবু পড়ল কি রোগে, 
শ্মশানেতে মেতে থাকে তান্ত্রিক যোগে;
হরলাল ডাক্তার,
নেই হাঁকডাক তার,
জোলাপ খাওয়ালো কষে, রোগ গেল ভোগে৷৷




যাদবপুরের যদুবাবু লোকটি বড়ই ঠাণ্ডা,
মুখটি বুজে চুপটি থাকো, এটাই তাহার ফান্ডা;
কিন্তু যদি খাবার পাতে,
মটন চিকেন রুই না থাকে,
ভীষণ রেগে মাথায় তোমার বসিয়ে দেবেন ডান্ডা৷৷



মধুবাবু মোক্তার, বহু নামযশ তার, 
এজলাশে আর যত উকিলরা খায় ঝাড়;
সংসার বাওয়ালে,
গিন্নীর সওয়ালে,
মধুবাবু মারে চুপ, মুখে নাই সাড়৷৷

ছবিঃ অনির্বাণ সেনগুপ্ত

Tuesday, 2 June 2020

একটি হাতির মৃত্যু


হাতিটা যখন গ্রামে ঢুকল, এদিক ওদিক ঘুরে মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা আনারসটা মুখে পুরল, আমি গাছের তলায় বসেছিলাম৷ কাউকে কিছু বলিনি৷ খাবার যখন পেয়ে গেছে চলে যাবে৷ ওরা আবার জানতে পারলে ... কিন্তু তার আগেই বিকট শব্দ৷ তাকিয়ে দেখলাম হাতিটার মুখ রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে৷ সে ছটফট করতে করতে সারা গ্রামে ছুটে বেড়াতে লাগল৷ ততক্ষণে সবাই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছে৷ কিন্তু হাতিটা কাউকে কিছু বলল না৷ কারো বাড়িতে হামলা চালালো না৷ কিছুক্ষণ ছোটাছুটি করার পর পুকুরে নেমে গিয়ে মাঝপুকুরে দাঁড়িয়ে পড়ল৷ পুকুরে অবশ্য জল প্রায় নেই৷ কতদিন বৃষ্টি হয়নি৷
কোতোয়াল কে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গেলামঃ
"হাতিটার কি হল? আনারসের মধ্যে কি ছিল?"
কোতোয়াল অট্টহাসি হেসে বলল, "ঠুসে বারুদ ভরা ছিল৷ ব্যাটা ঠিক টোপ গিলেছে৷"
"সে কি? দয়া করে কিছু করুন৷ ওকে বাঁচান৷"
ততক্ষণে গোস্বামী চলে এসেছে, "কেন রে ব্যাটা? হাতিদের ওপর তোর অত দরদ কেন? গেল বার যখন হাতিটা আমার কলাগাছগুলো উপড়ে নিল তখন তুই কোথায় ছিলিস?"
পাশ থেকে সরকারমশাই ফুট কাটলেন, "হাতিদের তোল্লাই দিয়ে দিয়েই এই অবস্থা হয়েছে৷ সে আগে যা হওয়ার হয়ে গেছে৷ রাজামশাই আসার পর এখন আর হাতিরা মানুষকে ভয় দেখাতে পারবে না৷"

প্রচণ্ড রাগে গা জ্বলতে লাগল আমার৷ এটা তাহলে রাজামশাইয়ের হাতি মারার নতুন কৌশল৷ দিন পনেরো আগে একটা হাতিকে বিষ খাইয়ে মেরেছিলেন৷ তার আগে একটাকে ফাঁদে আটকে গ্রামের সবাই মিলে খুঁচিয়ে মেরেছিল৷ এবার বোঝা গেল পরশু কেন রাজামশাই বণিকটার কাছ থেকে বারুদ কিনছিলেন৷ বললাম, "তাই বলে এত নৃশংসভাবে মারতে হবে?"
কোতোয়াল এক ধমক দিয়ে বলল, "চোপরাও রাজদ্রোহী! আর একটা কথা বললে তোকেও ঐরকম একটা আনারস খাইয়ে দেবো৷"
গোস্বামী বলল, "সেই হাতিটা যখন পণ্ডিতের বাড়ি ভেঙে দিয়েছিল তখন তুই কোথায় ছিলিস?"
আমার বলা হল না, পণ্ডিত এখনও মন্দিরের বেদীতে শুয়ে থাকে কেন? রাজামশাই কি ওর জন্য ছোটখাটো একটা ঘর বানিয়ে দিতে পারতেন না? পণ্ডিতের সেই ভাঙা ঘরটাকেও উনি সারাতে দেন নি৷ প্রত্যেকবার একটা করে মারা হয় আর রাজামশাই ঐ ভাঙা ঘরটা দেখিয়ে বলেন, হাতিরা কত বিপদ্জনক৷

তাকিয়ে দেখলাম হাতিটা পুকুরের মধ্যেই শুয়ে পড়েছে৷ তার নড়াচড়াও প্রায় থেমে গেছে৷ সারা গ্রামের লোক মহা উৎসাহে দেখছে হাতিটার মরণযন্ত্রণা৷ পরশু যখন বারুদের দাম বাবদ প্রত্যেক গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হল সবার মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল৷ এবছর অনাবৃষ্টিতে ফসল হয়নি বললেই চলে৷ তবু রাজার পেয়াদারা প্রত্যেকের ঘর থেকে খাজনা আদায় করে নিয়ে গেছে৷ যারা দিতে পারেনি তাদের আটক করেছে৷ তার ওপর চাঁদা তুলে বারুদ কেনায় লোকে তো খেপবেই৷ এখন তাদের ক্ষোভ মিটে গেছে৷ হাতি মারার উত্তেজনায় সবার চোখ জ্বলজ্বল করছে৷

হঠাৎ জোয়ান ছেলে নাথুরাম কপালে একটা ফেট্টি বেঁধে পুকুরের জলে লাফ দিল৷ হাতে একটা বিশাল বল্লম৷ গ্রামের লোক হোওওও করে চেঁচিয়ে উঠল৷ ঠিক হাতিটার তলপেটের কাছে গিয়ে পরপর কয়েকবার বল্লম চালালো৷ তারপর হাতিটার দেহের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে বল্লমটা মাথার ওপর তুলে চিৎকার করল, "জয়! রাজামশাইয়ের জয়!" বল্লমের ডগায় তখন একরত্তি একটা খেলনা হাতি৷ গ্রামের সব লোক উল্লাসে গলা মেলালঃ "জয়! রাজামশাইয়ের জয়!"

Monday, 1 June 2020

বয়কট চায়না

কদিন ধরে হঠাৎ স্যোসাল মিডিয়ায় চীনদেশের পণ্য বয়কট করার আবেদন জানিয়ে পোস্ট দেখতে পাচ্ছি৷ এরকম আবেদনের ঢেউ মাঝেমধ্যে ওঠে আবার মিলিয়েও যায়৷ চীনদেশের পণ্যের বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বা আমাদের দেশের উৎপাদন শিল্পের উন্নতির কোন লক্ষণ অবশ্য দেখা যায় না৷ তবে এবারে সমস্ত চীনা পণ্য বয়কটের বদলে স্মার্টফোনের চীনা অ্যাপ আনইনস্টল করার আবেদনই আসছে বেশী৷ সমস্ত চীনা পণ্য বয়কট করার আহ্বান যে বাস্তবসম্মত নয় তা অনেকে বুঝেছেন৷ সে যাই হোক এবারের ঢেউটাও মিলিয়ে যাওয়ার আগে চীনের শিল্পজাত পণ্য ছাড়া আরো কি কি বয়কট করা যেতে পারে তা একটু ভেবে দেখা যেতে পারে৷

এইমুহূর্তে হংকং এ সরকারবিরোধী আন্দোলনের খবর গোটা পৃথিবী জানে৷ ১৯৯৭ সালে হংকং ব্রিটিশ সরকারের থেকে চীনে হাতবদল হওয়ার সময় একটা চুক্তি হয়েছিল যে হংকং একটা বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে পারবে৷ হংকং এর প্রশাসন, আইনসভা, বিচারব্যবস্থা সবই চীনের মূল ভূখণ্ডের থেকে আলাদা হবে৷ সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় সরকার মূল ভূখণ্ডের জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে হংকং এ প্রয়োগ করার জন্য সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ এতে স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা করে হংকং এর মানুষ পথে নেমেছে আর পুলিস নামিয়ে তাদের আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা হচ্ছে৷ আমাদের দেশেও ১৯৪৭ সালে জম্মু- কাশ্মীর নামের দেশীয় রাজ্যটি ভারতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল তার বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার চুক্তি মেনে৷ তারপর ক্রমান্বয়ে ঐ রাজ্যের মানুষের নাগরিক অধিকার গুলো হরণ করা হয়েছে, অবশেষে গত বছর রাজ্যের বিধানসভার মতামত না নিয়েই ৩৭০ ধারায় জম্মু কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন খারিজ করা হয়েছে৷ রাজ্যের মানুষ প্রতিবাদে নামলে সেনাবাহিনীর বুটের তলায় তাদের দমন করা হয়েছে৷ ভদ্রলোকের চুক্তি ভঙ্গ করা, রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন কেড়ে নেওয়া, নাগরিকের প্রতিবাদের ওপর দমনপীড়ণ চালানোর চীনা মডেলটিকে আমরা বয়কট করতে পারি৷

আমরা জানি চীনে নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের অস্তিত্ব নেই৷ যে কটা সংবাদমাধ্যম আছে সেগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত৷ আমাদের দেশে অবশ্য বেসরকারী সংবাদমাধ্যমের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এমনকি দূরদর্শন বা আকাশবানীর মত সরকারী সংস্থাগুলোও সরকারী মতের পাশাপাশি বিরোধী মতও প্রচার করত৷ কিন্তু এখন সরকারী সংবাদমাধ্যমগুলো তো বটেই, প্রায় সমস্ত বেসরকারী সংবাদমাধ্যমও অন্ধভাবে সরকারকে সমর্থন করতে বাধ্য৷ যে কজন সাহসী সাংবাদিক সত্যানুসন্ধানে ব্রতী, তাঁদের নানাবিধ হুমকি, গ্রেফতার, এমনকি প্রাণসংশয়েরও মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷ গ্লোবাল প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারত ২০১৩ সালের ১০৫তম অবস্থান থেকে ২০২০ তে ১৪২ তম অবস্থানে নেমে গেছে৷ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার এই চীনা অভ্যাসটাকে আমরা বয়কট করতে পারি৷

চীনে শ্রমিকদের অধিকার অনেকটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়৷ মালিকপক্ষ যখন খুশি ছাঁটাই করতে পারে, শ্রমিকরা ইউনিয়ন করতে পারেনা, ধর্মঘটের অধিকার নেই - এমন সব দাবী পশ্চিমের সংবাদপত্রগুলো করে থাকে৷ আমাদের দেশে অনেক লড়াইয়ের মাধ্যমে শ্রমিকরা তাঁদের অধিকার অর্জন করেছেন৷ কিন্তু কর্পোরেটদের চাপে ক্রমশ তাদের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ স্থায়ী কর্মীর তুলনায় ঠিকা কর্মীর অনুপাত বাড়ানো হচ্ছে, ন্যূনতম মজুরির আইন নেই, "হায়ার এন্ড ফায়ার" নীতি জোরদার হচ্ছে৷ এখন তো অনেক রাজ্যে কাজের সময় ৮ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা হয়ে গেছে৷ ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে গেলেও সরকার ও মালিকপক্ষের প্রতিহিংসার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী এই কথিত চীনা মডেলটাকেও আমরা বয়কট করতে পারি৷

ছোটবেলায় শিখেছিলাম অপরের খারাপটাকে বর্জন আর ভালোটাকে গ্রহণ করা উচিৎ৷ সাম্প্রতিক করোনা অতিমারী চীনেই উৎপত্তি হলেও তারা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এই অসুখকে দমন করতে পেরেছে৷ উন্নত জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকার, দল ও সাধারণ মানুষের হাতে হাত মিলিয়ে কাজের মধ্য দিয়েই এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে৷ আরেকটা বিষয় হল চীনের দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প৷ চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ২০২০ সালের মধ্যে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য স্থির করেছে৷ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী গত চল্লিশ বছরে ৮০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হয়েছে৷ গতবছরের হিসেব অনুযায়ী দেশে এখনও ৫০ লক্ষ দরিদ্র মানুষ আছেন৷ করোনা সঙ্কট সত্ত্বেও তাঁদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলতে তারা বদ্ধপরিকর৷

এখন যদি ভারত যদি চীনের ভালো অভিজ্ঞতাগুলো থেকে শিক্ষা নেয় এবং খারাপ জিনিসগুলো বয়কট করে তাহলে চীনা অ্যাপ আনইনস্টল করার থেকেও ভালো কাজ হবে৷ পাশাপাশি যদি বেসরকারীকরণের রাস্তা ছেড়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উৎপাদন শিল্পের উন্নতি ঘটায় তাহলে হয়ত একদিন চীনের ওপর অতি নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে৷