Monday 16 October 2017

ঈশ্বরের লুডো আর ব্ল্যাকহোলের চুল

"ঝাউবাংলোর রহস্য"র সাতকড়ি সাঁতরা কে মনে আছে? প্যালারাম সেই সবুজ দাড়িওয়ালা বিজ্ঞানীকে তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন "থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির সঙ্গে অ্যাকোয়া টাইকোটিস যোগ করলে কি হয় বলতে পারো?" অ্যাকোয়া টাইকোটিস অর্থাৎ জোয়ানের আরকের সঙ্গে থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির কি সম্পর্ক থাকতে পারে সে প্রশ্ন সঙ্গতভাবেই উদয় হয়েছিল ক্যাবলার মনে। এই প্রবন্ধের শিরোনাম দেখে পাঠকের মনেও একই রকম প্রশ্ন জাগতে পারে। ব্ল্যাকহোল এমনিতেই গোলমেলে জিনিস। তার ওপর সে টাকমাথা না চুল আছে এসব প্রশ্ন করলে তো ব্যাপারটা রীতিমত পুঁদুচেরি মানে ভীষণ গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়! আর চুল যদি থেকেই থাকে তার সঙ্গে ঈশ্বর লুডো খেলেন কি না তার কি লেনদেন? গপ্পোটা তাই গোড়া থেকেই ফাঁদি।

বিংশ শতকের গোড়ার দিকেই যে তিনটে আবিষ্কার পদার্থবিজ্ঞানের সাবেকি ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল সেই বিশেষ ও সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মধ্যে কমন নামটা হল অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদের (Special Theory of Relativity) সূত্রায়ণে প্রধাণ ভূমিকা ছিল আইনস্টাইনের। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ (General Relativity) তো তাঁরই হাতে গড়া বলা যেতে পারে। তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের (Quantum Mechanics) সঙ্গে আইনস্টাইনের সম্পর্কটা ছিল অম্লমধুর। কোয়ান্টাম তত্ত্বের চারাগাছ যাঁরা রোপণ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম আইনস্টাইন। তাঁর নোবেল প্রাপ্তিও কোয়ান্টাম তত্ত্বের জন্য। অথচ সে চারাগাছ যখন মহীরূহ হয়ে দাঁড়ালো তখন আইনস্টাইনই হয়ে উঠলেন তার সবচেয়ে বড় সমালোচক। ঈশ্বরের লুডো খেলার ব্যাপারটা জানতে হলে আইনস্টাইনের সঙ্গে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই দ্বন্দ্বটা বুঝতে হবে। 

"কোয়ান্টা" শব্দের অর্থ হল গুচ্ছ। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এহেন নামকরণের কারণ হল পদার্থবিজ্ঞানের এই বিপ্লবটি সাধিত হয়েছিল আলোর আঁটি পাকানোর দ্বারা। ধরা যাক আপনি জল দিয়ে ওষুধের ট্যাবলেট খাচ্ছেন। আপনি একটা, দুটো বা তিনটে ট্যাবলেট খেতে পারেন, কিন্তু দেড়খানা বা পৌনে তিনখানা খেতে পারবেন না যদি না ট্যাবলেটটা ভাঙা না হয়। কিন্তু জলের ক্ষেত্রে তেমন বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি স্বচ্ছন্দে আড়াই গ্লাস বা পৌনে তিন গ্লাস জল খেতে পারেন। আলোকে মনে করা হত জলের মত। অর্থাৎ একটা পদার্থ যেকোন পরিমাণ আলো শোষণ বা বিকিরণ করতে পারেন। এই ধারণায় ঘা দিলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকের সন্ধিক্ষণে।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক
তিনি দেখালেন কোন পদার্থ কে উত্তপ্ত করলে সে যে আলো বিকিরণ করে সেই বিকিরণ যেকোন পরিমাণে হয় না, হয় গুচ্ছ বা কোয়ান্টার আকারে। এই কোয়ান্টাগুলোর পরে নাম দেওয়া হবে ফোটন (photon)। এক একটা ফোটনের শক্তি সেই আলোর কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। এই সমানুপাতিক ধ্রুবককে "প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক" বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ একটা ফোটনকণার শক্তির মান প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক ও সংশ্লিষ্ট আলোর কম্পাঙ্কের গুণফলের সমান। দ্বিতীয় ঘা টা মেরেছিলেন আইনস্টাইন। কোন ধাতব পদার্থের ওপর আলো পড়লে সেই আলো থেকে শক্তি পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ধাতবপৃষ্ঠের ওপর বিচরণশীল মুক্ত ইলেকট্রনগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। এই ঘটনাকে বলে আলোকতড়িৎ ক্রিয়া (photoelecric effect )। আইনস্টাইন দেখালেন আপতিত আলোক ইলেকট্রনগুলোকে শক্তি সরবরাহ করে গুচ্ছ বা কোয়ান্টার আকারে। অর্থাৎ আলোর শোষণ বা বিকিরণ দুইই হয় কোয়ান্টার আকারে। আরো কয়েক বছর পর এই দুই তত্ত্বের সাহায্যে নীলস বোর পরমাণুর কোয়ান্টাম মডেল বাজারে আনবেন। 


কিন্তু এসব করতে গিয়ে আলোর চরিত্র নিয়ে একটা গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেল। সেই ষোড়শ শতকে আইজ্যাক নিউটন আলোকে কণিকা হিসেবে কল্পনা করে প্রতিফলন ও প্রতিসরণের সূত্রগুলো ব্যাখ্যা করেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা গেল ব্যাতিচার (interference), অপবর্তনের (diffraction) মত বেশ কিছু ধর্ম কণিকাতত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি স্কটিশ গণিতজ্ঞ ও পদার্থবিদ জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল দেখালেন তড়িৎ ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্রের পরস্পরের লম্বদিকে কম্পনের ফলে একধরণের তরঙ্গ সৃষ্টি হয় যাকে বলে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (electromagnetic wave)। আলোও একধরণের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। শুধু আলো নয়, এক্স রশ্মি, অতিবেগুনী রশ্মি, রেডিও তরঙ্গ সবই আসলে তড়ীৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, পার্থক্য শুধু তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। 

তো আলোর কোয়ান্টাম উত্থানের ফলে নিউটনের সেই কণিকা তত্ত্বই যেন ফিরে এলো। কিন্তু পরিস্থিতি ইতিমধ্যে অনেক জটিল হয়ে গেছে। আলোকে কণা ভাবলে ব্যাতিচার, অপবর্তনকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। আবার আলোকে তরঙ্গ ভাবলে কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ, আলোকতড়িৎ ক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছিলেন যতই আজগুবি লাগুক, এই সমস্যার সমাধান একটাই, তা হল আলোর দ্বৈত চরিত্রকে মেনে নেওয়া। অর্থাৎ আলো (এবং অন্যান্য তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ) কোন কোন পরীক্ষায় দেখা দেয় তরঙ্গরূপে আবার কোন কোন পরীক্ষায় আবির্ভূত হয় কণা রূপে। কোন পরীক্ষায় কোন রূপ দেখা যাবে তা নির্ভর করছে পরীক্ষার যন্ত্রপাতির আকারের ওপর। যন্ত্রের আকার যদি পরীক্ষাধীন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে অনেক বড় হয় তবে আলোর কণারূপ দেখা যাবে। আর যন্ত্রপাতির আকার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কাছাকাছি হলে দেখা যাবে তরঙ্গরূপ। 


আলোর দ্বৈতসত্ত্বা (wave particle duality) স্বীকার করে নেওয়ার সঙ্গে বলা যেতে পারে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গেল। প্রশ্ন উঠল আলোর যদি দুই রূপ থাকতে পারে তাহলে তখনো অবধি মৌলিক কণা বলে পরিচিত ইলেকট্রন, প্রোটনরা কি দোষ করল? তাদের কেন দ্বৈত সত্ত্বা থাকবেনা? এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন ফ্রান্সের লুই ডি ব্রগলী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি ঘোষণা করলেন, হ্যাঁ মৌলিক কণাদেরও তরঙ্গরূপ আছে। এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভরবেগের (ভর ও গতিবেগের গুণফল) সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতিক। চারবছর বাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবোরেটরিতে ইলেকট্রন তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করলেন জোসেফ ডেভিসন ও লেস্টর জার্মার। শুধু ইলেকট্রন নয়, সমস্ত কণা এবং দৃঢ় বস্তুরই (এমনকি আমাদেরও) দ্বৈত সত্ত্বা আছে। কিন্তু ইলেকট্রনের মত হালকা কণাগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক বেশী বলে ওদের তরঙ্গরূপকে পর্যবেক্ষণ করা তুলনায় সহজ।  

ইতিমধ্যে ময়দানে নেমে পড়েছেন আরউইন স্রোডিংগার, উলফগ্যাং পাউলি, ম্যাক্স বর্ন, ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ এবং আরো অনেকে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব যত গাণিতিক সূত্রায়ণের মাধ্যমে দৃঢ় অবয়ব ধারণ করতে লাগল ততই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠল এই বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের সাবেকি চিন্তাভাবনায় বড় রকমের পরিবর্তন প্রয়োজন। জানা গেল যে ইলেকট্রন তরঙ্গের কথা বলা হচ্ছিল তা আসলে সম্ভাবনা তরঙ্গ। বোঝা গেল পরমাণুর ভিতরে রাদারফোর্ড বা বোর যেমন বলেছিলেন, ইলেক্ট্রনগুলো মোটেই সেরকম কোন কক্ষপথে নিউক্লিয়াসকে প্রদক্ষিণ করেনা। ইলেকট্রনের তরঙ্গ পরমাণুর মধ্যে একধরণের মেঘের মত ছেয়ে থাকে। কোন স্থানে ইলেকট্রনের তরঙ্গরাশির বর্গ করলে সেই স্থানে ইলেকট্রনের থাকার সম্ভাবনা পাওয়া যায়। আরো জানা গেল কোন কণার অবস্থান এবং ভরবেগ একইসঙ্গে নিখুঁতভাবে মাপা যায়না। যদি অবস্থানকে নিখুঁতভাবে মাপার চেষ্টা করা হয় তাহলে ভরবেগ পুরোপুরি অনির্ণেয় হয়ে যাবে।  আবার ভরবেগ নিখুঁতভাবে মাপলে অবস্থান পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আরেকটা মাঝামাঝি উপায় হল অবস্থান আর ভরবেগ কোনটাই নিখুঁত ভাবে মাপা হলনা, কিন্তু কোনটাই আবার পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল না। দুটো রাশিতেই কিছু কিছু অনিশ্চয়তা থাকল। ব্যাপারটা বোঝার জন্য ধরা যাক একটা পদার্থের পরমাণুর মধ্যে একটা ইলেকট্রনের অবস্থান নির্ণয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাহলে একটা আলোকরশ্মিকে ঐ ইলেকট্রনের ওপর ফেলতে হবে। কিন্তু আলোকরশ্মি অর্থাৎ ফোটন কণার স্রোতের সঙ্গে যেই ইলেকট্রনের সংঘর্ষ হবে অমনি ইলেকট্রনের ভরবেগ বদলে যাবে। অর্থাৎ অবস্থান মাপতে গিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ইলেকট্রনের ভরবেগ। গাণিতিক ভাষায় হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি (Uncertainty principle) বলছে অবস্থান ও ভরবেগের অনিশ্চয়তার গুণফল কোনভাবেই প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের চেয়ে কম হবেনা। 




এককথায় বলা যায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিউটনের সময় থেকে চলে আসা "নির্দেশ্যবাদে"র (Determinism) গোড়ায় জোরালো আঘাত করল। "নির্দেশ্যবাদ" অনুযায়ী কোন একটা নির্দিষ্ট মূহুর্তে আমরা যদি কোন বস্তু বা বস্তুসমষ্টির অবস্থান ও ভরবেগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে থাকি এবং ঐ বস্তু বা বস্তসমষ্টির ওপর ক্রিয়াশীল সবরকম বাহ্যিক বল সম্পর্কিত ডিটেলস জানতে পারি তাহলে ভবিষ্যতের যেকোন মূহুর্তে ঐ বস্তু বা বস্তুসমষ্টির অবস্থান ও ভরবেগ নির্ণ্য করতে পারব। আরেকটু এগিয়ে বলতে পারি - আজ, এই মুহূর্তে মহাবিশ্ব সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য যদি আমাদের নাগালে থাকে, তবে আমরা যেকোন সময়ে মহাবিশ্ব সম্পর্কে নিখুঁত ভবিষ্যৎবাণী করতে পারব। আমরা ভবিষ্যৎবাণী করতে পারছিনা তথ্যসংগ্রহে অপারগতার জন্য, কিন্তু সবকিছুই আসলে পূর্বনির্ধারিত। এই দর্শনের সঙ্গে ঈশ্বরবিশ্বাসী বা ভাগ্যবিশ্বাসীদের "সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা" বা "ভাগ্যে যা আছে তাই হবে" টাইপের ধারণার তুলনা করতে পারি। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই অনিশ্চয়তার যদি ঠিক হয় তবে তার মানে দাঁড়ায় ঈশ্বর তাঁর জাবদা খাতায় সব ঘটনা লিখে রাখেননি। বরং তিনি লুডো খেলেন এবং লুডোর দান অনুযায়ী দুনিয়া চালান। এই ব্যাপারটাই আইনস্টাইনের পছন্দ হয়নি। প্রথাগত অর্থে ঈশ্বরে বিশ্বাসী না হলেও তিনি নির্দেশ্যবাদে আস্থাশীল ছিলেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্মের পিছনে তাঁর হাত ছিল, কিন্তু সন্তানের বিপথে যাওয়া তিনি মেনে নিতে পারেননি! তিরিশের দশকের শেষভাগে এনিয়ে নীলস বোরের সঙ্গে আইনস্টাইনের এক মহাবিতর্ক হয়। আইনস্টাইন নানারকম যুক্তি ও কাল্পনিক পরীক্ষার অবতারণা করে অনিশ্চয়তা নীতির অসারতা প্রমাণ করতে চেয়ে ব্যর্থ হন। বিজ্ঞানীমহল বোর, হাইজেনবার্গের মতই মেনে নেন। আইনস্টাইন এব্যাপারে উচ্চবাচ্য না করলেও জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই বিশ্বাসে অটল ছিলেন যে "ঈশ্বর লুডো খেলেন না"। এই বিখ্যাত উক্তির জের টেনে আইনস্টাইনের মৃত্যুর ১৫ বছর পর স্টিফেন হকিং বলবেন, "ঈশ্বর যে শুধু লুডো খেলেন তাই নয়, তিনি কখনো কখনো লুডোর ছক্কাটাকে এমন জায়গায় ছুঁড়ে ফেলেন যে সেটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।" এই "এমন জায়গা"টা হল একটা কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল (black hole)। তাই হকিং কেন এই মন্তব্য করেছিলেন তা জানতে হলে ব্ল্যাকহোল কি সেটা বুঝতে হবে।

আমরা জানি হিমালয় পর্বত থেকে বাতাসের একটা নাইট্রোজেন অণু সবাই পৃথিবীর আশেপাশে আটকে রয়েছে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ বলের জন্য। কিন্তু কোন বস্তু যদি সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটারের চেয়ে বেশী বেগে ওপরের দিকে গতিশীল হয় তবে সে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণের প্রভাব কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে। এই ১১.২ কিমি/সেকেন্ড হল পৃথিবী পৃষ্ঠের ওপর মুক্তিবেগ। চন্দ্রপৃষ্ঠের ওপর মুক্তিবেগ অনেক কম ৪.২ কিলোমিটার/সেকেন্ড। এই কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন, অক্সিজেনের মত গ্যাস পাওয়া যায়, কিন্তু চাঁদের অত্যন্ত পাতলা বায়ুমণ্ডলে এদের পাওয়া যায় না। সূর্যের ওপর সূর্যের মধ্যাকর্ষণজনিত মুক্তিবেগ আরো বেশী, সেকেন্ডে ৬১৭.৫ কিমি। তা এমন কোন নক্ষত্র বা মহাজাগতিক বস্তু কি থাকতে পারে যার আকর্ষণ কাটিয়ে কোন বস্তুই বেরোতে পারবে না? পারে, যদি সেই নক্ষত্রটির ওপর মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটারের বেশী হয়। কারণ এটাই শূণ্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী আলোর চেয়ে বেশী বেগে কোন বস্তু গতিশীল হতে পারে না। কিন্তু এত বিশাল মুক্তিবেগ থাকতে গেলে নক্ষটির ভর খুব বেশী আর আয়তন খুব কম হতে হবে অর্থাৎ নক্ষত্রের উপাদান আসীম ঘনত্বের হতে হবে। এইরকম আলোকেও বেরোতে দেয়না এমন তারকার অস্তিত্ত্ব উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকেই কল্পনা করেছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন মিচেল বা ফরাসী বিজ্ঞানী ল্যাপ্লাস। কিন্তু তাঁদের কল্পনা দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারেননি, কারণ আলোর চরিত্র নিয়ে ধোঁয়াশা। আলো যদি তরঙ্গ হয় তার ওপর মহাকর্ষের প্রভাব কি হবে তা নিউটনের তত্ত্ব থেকে জানা ছিল না। আবার আলোকে বস্তুকণার মত ধরলেও মুশকিল। একটা ঢিলকে ওপরের দিকে ছুঁড়লে তার দ্রুতি মন্থরতর হবে। কিন্তু আলোর দ্রুতি ধ্রুবক, কোনরকম বলের প্রভাবেই আলোর দ্রুতি বদলায় না। কাজেই মহাকর্ষ কিভাবে আলোর ওপর কাজ করবে তা স্পষ্ট ছিল না।

পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটল যখন ১৯১৬ সালে মহাকর্ষণের এক নতুন ব্যাখ্যা আমদানি করলেন আইনস্টাইন। তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব অনুযায়ী মধ্যাকর্ষণ দুটো বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল নায়, জ্যামিতির খেলা। জ্যামিতি মানে স্পেসটাইমের জ্যামিতি। এক দশক আগেই বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বে তিনি দেখিয়েছেন যে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা নিয়ে আমাদের তিনমাত্রার স্পেস আর একমাত্রার সময় বা টাইমকে আলাদা করে না দেখে চারমাত্রার স্পেসটাইম (spacetime continuum) হিসেবে দেখাই ভালো। তো আশেপাশে যখন কোন ভারী বস্তু নেই তখন স্পেসটাইম সমতল থাকে। কিন্তু কোন ভারী বস্তু রাখলেই স্পেসটাইম আর সমতল থাকেনা, বক্রতল হয়ে যায়। যত ভারী বস্তু রাখা হবে, এই বক্রতলের বক্রতা তত বেশী হবে। এবার দ্বিতীয় আরেকটি বস্তুর কথা ভাবা যাক। দ্বিতীয় বস্তুটি সমতল স্পেসটাইমে থাকলে অর্থাৎ নিউটনের ভাষায় তার ওপর কোন বল প্রযুক্ত না হলে সে সমবেগে সরলরেখায় ছুটবে। যখনই ভারী বস্তুটাকে রাখা হবে সে দ্বিতীয় বস্তুর ওপর মধ্যাকর্ষণ বল প্রয়োগ করে তাকে একটা নির্দিষ্ট পথে চালাবে, যেমন সূর্য পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার পথে চালাচ্ছে। আইনস্টাইনের মতে অবশ্য দ্বিতীয় বস্তুটা সেই পথেই চলবে যাতে তাকে সবচেয়ে কম দুরত্ব পেরোতে হয়। যেটা আমরাও করি, কোন জায়গায় যাওয়ার আগে জেনে নিই শর্টেস্ট রুটটা কি (যদি না হাঁটা বা বেড়ানোটাই উদ্দেশ্য হয়)। সমতল স্পেসটাইমে সরলরেখায় ছোটার কারণ ওভাবে চললেই ন্যূনতম দুরত্ব অতিক্রম করতে হয়। সমতল ব্ল্যাকবোর্ডে দুটো বিন্দু এঁকে তাদের অসংখ্য রেখা দিয়ে যোগ করতে পারি, কিন্তু সবচেয়ে কমদৈর্ঘের রেখাটা হবে সরলরেখা। এবার যদি একটা ফুটবলের ওপর দুটো বিন্দু দিই, তাহলে কিন্তু তাদের মধ্যের ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্যের পথ সরলরেখা হবেনা। স্পেসটাইমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ভারী বস্তুটা স্পেসটাইমটাকে এমনভাবে বেঁকিয়ে চুড়িয়ে রাখবে যাতে দ্বিতীয় বস্তুটা সরলরেখার বদলে ন্যূনতম দুরত্বের পথে ছোটে, আমরা যেমন রাস্তায় খানাখন্দ থাকলে একটু ঘুরপথে যাই।  

মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের এহেন জ্যামিতিক ব্যাখ্যায় আলোর প্রভাবিত হওয়ার পথে কোন বাধা রইলনা। বক্রতলে আলোর দ্রুতি একই থাকে বটে কিন্তু গতিপথ বেঁকে যায়। এ যে শুধু তত্ত্ব নয়, তিন বছরের মধ্যে তা হাতে নাতে দেখালেন আর্থার এডিংটনের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। বৃষরাশির কিছু নক্ষত্র থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা আলোকরশ্মি সূর্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কতটা বেঁকে যায় তা পর্যবেক্ষণ করে তাঁরা জানালেন আইনস্টাইনের গণনা এক্কেবারে সঠিক। 
সিঙ্গুলারিটিকে ঘিরে একটা বৃত্তাকার তল পাওয়া যাবে যে তলের ওপর মুক্তিবেগ আলোর বেগের সমান। ফলে বাইরে থেকে যেকোন বস্তু এই তল দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারে, কিন্তু ভেতর থেকে কোনকিছুই বাইরে বেরোতে পারবেনা। নক্ষত্রের এই অন্তিম অবস্থাই হল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর।

১৯২৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই এডিংটনের কাছে গবেষণা করার উদ্দেশ্যে মাদ্রাজ থেকে জাহাজে চাপেন এক তামিল ব্রাহ্মণসন্তান, সুব্রহ্মনিয়ম চন্দ্রশেখর। জাহাজে দীর্ঘপথ পারি দেওয়ার সময় তিনি তিনি চিন্তা করছিলেন একটা নক্ষত্রের অন্তিম দশা নিয়ে। আমাদের সূর্য সমেত সমস্ত "জীবিত" নক্ষত্রে অবিরাম নিউক্লিয়ার সংযোজন (fusion) চুল্লী চালু থাকে। নক্ষত্রের আলো ও তাপের উৎস এই চুল্লী। আবার এই চুল্লীর তাপে যে বহির্মুখি চাপের সৃষ্টি হয় সেই চাপই নক্ষত্রটিকে ভরের জন্য চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু চুল্লীর জ্বালানী যখন শেষ হয়ে যায় তখন? চন্দ্রশেখর অঙ্ক কষে দেখলেন পাউলির অপবর্জন নীতি (exclusion principle) (দুটি ইলেকট্রন একই অবস্থায় থাকতে পারে না) মহাকর্ষীয় সংকোচনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে, যদি তারাটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ভর সূর্যের ভরে দেড়গুণের বেশী না হয়। এই ভরকে বলা হয় চন্দ্রশেখর সীমা। এক্ষেত্রে তারাটির অন্তিম দশা হবে শ্বেত বামন (white dwarf)। তারাটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ভর যদি সূর্যের ভরের ১.৪ গুণ থেকে ৩ গুণের মধ্যে হয় তাহলে আরো সংকুচিত হয়ে নিউট্রন স্টারে (neutron star) পরিণত হবে। এক একটা নিউট্রন স্টারের ঘনত্ব এমন যে কয়েক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের গোলকের মধ্যে গোটা কতক সূর্য ঢুকে যাবে।
সুব্রহ্মণিয়ম চন্দ্রশেখর
ভর আরো বেশী হলে নক্ষত্রটি চুপসে যেতে থাকবে এবং তার সমস্ত ভর অবশেষে একটা বিন্দুতে গিয়ে জমা হবে। এই বিন্দু হল একধরণের স্পেসটাইম সিঙ্গুলারিটি (singularity), কারণ এই বিন্দুতে ঘনত্ব এবং স্পেসটাইমের বক্রতা অসীম। সিঙ্গুলারিটিকে ঘিরে একটা বৃত্তাকার তল পাওয়া যাবে যে তলের ওপর মুক্তিবেগ আলোর বেগের সমান। ফলে বাইরে থেকে যেকোন বস্তু এই তল দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারে, কিন্তু ভেতর থেকে কোনকিছুই বাইরে বেরোতে পারবেনা। নক্ষত্রের এই অন্তিম অবস্থাই হল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। "ব্ল্যাক", কারণ কালোরঙের বস্তু যেমন সমস্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে শোষণ করে, ব্ল্যাকহোল তেমনি যাবতীয় বস্তুকে টেনে নেয় নিজের ভেতর। ঐ বৃত্তাকার তলকে বলা হয় ঘটনা দিগন্ত (horizon)।


 "ব্ল্যাকহোল" নামটার উৎপত্তি অবশ্য অনেক পরে। ১৯৬৯ সালে জন হুইলার প্রথম এই শব্দটা ব্যবহার করেন। এর মধ্যেই ব্ল্যাকহোলের চরিত্র বেশ খানিকটা জানা গেছে। যেহেতু ঘটনা দিগন্তের মধ্য থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই ব্ল্যাকহোলের ভেতরে কি আছে না আছে তা জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। শুধুমাত্র বাইরের স্পেসটাইমের বক্রতা থেকে আমরা ব্ল্যাকহোলের ভর, আধান ও কৌণিক ভরবেগ নির্ণয় করতে পারি। ব্যাপারটা তাৎপর্য মারাত্মক। যে নক্ষত্রটা চুপসে গিয়ে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হল তার উপাদান বা গঠনের কোন ছাপই আর ব্ল্যাকহোলের মধ্যে পাওয়া যাবে না। যে পদার্থগুলো ব্ল্যাকহোলের ভিতর গিয়ে পড়ছে তাদের মধ্যে সঞ্চিত তথ্যও চিরতরে হারিয়ে যাবে ব্ল্যাকহোলের মধ্যে। এই ব্যাপারটাকে হুইলার বলেছিলেন চারটি শব্দেঃ "ব্ল্যাকহোলের কোন চুল নেই" (blackholes have no hair)। চুল এখানে জটিলতার প্রতীক। ধরা যাক তিন যমজ ভাই, হুবহু একরকম দেখতে, শুধুমাত্র তাদের হেয়ার স্টাইল আলাদা। এবার যদি তিনজনকেই ধরে ন্যাড়া করে দেওয়া হয় তাহলে আর তাদের আলাদা করে চেনা যাবে না। সেরকমই একই ভর, আধান ও কৌণিক ভরবেগ বিশিষ্ট একাধিক ব্ল্যাকহোলকে পৃথক করার উপায় নেই। এতেও খুব সমস্যা ছিল তা নয়। গোল বাঁধল যখন স্টিফেন হকিং কোয়ান্টাম তত্ত্বকে বক্র স্পেসটাইমে প্রয়োগ করতে গেলেন। 
স্টিফেন হকিং 

হকিং ততদিনে বিরল মোটর নিউরোন ডিসিজে আক্রান্ত। হাঁটা চলা, কথা বলা কিছুই করতে পারছেন না। তবু শারীরিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বতত্ত্ব ও সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে একের পর যুগান্তকারী গবেষণা করে চলেছেন। ব্ল্যাকহোলের তাপগতিবিদ্যার চর্চা করতে গিয়ে তিনি একটা চমকপ্রদ ফল পেলেন। ব্ল্যাকহোল নাকি যতটা কালো ভাবা হচ্ছিল, ততটা কালো নয়! একটা বস্তুকে উত্তপ্ত করলে সে যেমন আলো ও তাপ বিকিরণ করে, ঠিক সেরকমই ব্ল্যাকহোল থেকেও শক্তির বিকিরণ ঘটে। এই ঘটনা কে বলা হয় হকিং বিকিরণ। আগেই বলেছি কোয়ান্টাম তত্ত্ব ধ্রুপদী নির্দেশ্যবাদের গোড়া ধরে টান দিয়েছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এক ধরণের কোয়ান্টাম নির্দেশ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল। এই নীতি অনুযায়ী আজকের তথ্য থেকে ভবিষ্যতে কোন কণার অবস্থান বা ভরবেগ নিখুঁত ভাবে বলা যাবেনা ঠিকই, কিন্তু ঐ কণার কোনো অবস্থান বা ভরবেগ থাকার সম্ভাবনা কতটা তা নিখুঁতভাবে বলা যাবে। এই সম্ভাবনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা থাকে কণাটির তরঙ্গরাশি বা ওয়েভ ফাংশানে। এখন এই কণাটি যদি কোন ব্ল্যাকহোলে ঢুকে পড়ে তাহলে "নো হেয়ার থিয়োরেম" অনুযায়ী তার ওয়েভ ফাংশানে সঞ্চিত সমস্ত তথ্য মুছে যাবে! তাহলে হকিং বিকিরণের মাধ্যমে সেই কণাটা যদি আবার বাইরে বেরিয়ে আসে তাহলে তার তরঙ্গরাশিতে আর কোন পুরনো "স্মৃতি" থাকবে না। ফলতঃ আগের তথ্যের ভিত্তিতে কোনরকম ভবিষ্যতবাণীও করা যাবে না আর। এভাবেই হকিং বিকিরণ আর নো হেয়ার থিয়োরেম মিলে "কোয়ান্টাম নির্দেশ্যবাদে"র বারোটা বাজিয়ে দিলো। ব্যাপার যেটা দাঁড়ালো, ঈশ্বর শুধু লুডো খেলেন তাই নয়, কাছাকাছি ব্ল্যাকহোল থাকলে তিনি লুডোর ছক্কাটাকে হারিয়ে ফেলতে পারেন!   


তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে এটা একটা ধাঁধার মত। এই ধাঁধা "ব্ল্যাকহোল ইনফরমেশান প্যারাডক্স" নামে পরিচিত। চারদশক ধরে বিজ্ঞানীরা এই ধাঁধার সমাধান করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ৯০ এর দশক থেকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের নবীন শাখা স্ট্রিং থিয়োরির (string theory) গবেষণা "নো হেয়ার থিয়োরেম"এর ওপর সন্দেহ বাড়িয়ে দিলো। ব্ল্যাকহোল যে তথ্য গিলে ফেলে, বিকিরণের মাধ্যমে সেই তথ্য ফিরিয়ে দেয় এই ধারণা পোক্ত হতে থাকল বিজ্ঞানীমহলে। কিন্তু কিভাবে তা হতে পারে সেটা এখনো স্পষ্ট হয়নি। এই বছরের গোড়ায় একটা সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছেন হকিং স্বয়ং। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সহকর্মী ম্যালকম পেরি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু স্ট্রমিংগারের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা একটি প্রবন্ধে তিনি জানিয়েছেন- ভর, আধান ও কৌণিক ভরবেগ ছাড়াও ব্ল্যাকহোলের অসংখ্য সংরক্ষিত "সুপার ট্রান্সলেশান চার্জ" থাকতে পারে। চার্জ অর্থে তড়িতাধান নয়, বিভিন্ন ধরণের সংরক্ষিত রাশিকে "চার্জ" বলা হয়। এই চার্জগুলো "নরম চুলে"র মত কাজ করে, অর্থাৎ কোন বস্তু ব্ল্যাকহোলের মধ্যে পড়লে তার তরঙ্গরাশিতে সঞ্চিত তথ্য ধরা থাকতে পারে এই নরম চুলে। ঠিক যেমন গোঁফদাড়িতে লেগে থাকা দুধ বা মাংসর টুকরো থেকে আন্দাজ করা যেতে পারে আমি কি খেয়েছি! 
এই তথ্য ধরে রাখার প্রক্রিয়া যে পুরোপুরি বোঝা গেছে তা নয়। "নরম চুল"কি ব্ল্যাকহোলের মধ্যে পড়া সমস্ত তথ্যই ধরে রাখতে পারে সেটাও স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে কাজ এখনো চলছে। ব্ল্যাকহোলের চুল পাওয়া গেলে ঈশ্বরকে লুডো খেলা থেকে নিবৃত্ত করা যাবে না বটে, কিন্তু তাঁর লুডোর ছক্কাটা যাতে হারিয়ে না যায় সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ
১। L Ponomarev, "The Quantum Dice", Mir Publishers Moscow (1988)
২। স্টিফেন ডব্লু  হকিং, "কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস", অনুবাদঃ শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত, বাউলমন প্রকাশন (১৯৯৩)
৩। Gary T. Horowitz, "Black holes have soft quantum hair", APS Physics 9, 62 (2016)

* "আমি অনন্যা" পত্রিকার অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত