Friday 30 June 2017

Not in My Name

জুন ২০১৪, পুণে নরেন্দ্র মোদি তখতে বসার এক সপ্তাহের মধ্যে ২৪ বছরের তরুণ সফটওয়ার কর্মী মহসিন শেখ কে পিটিয়ে মারল হিন্দু রাষ্ট্র সেনা৷ "একটা উইকেট পড়ল" বলে উল্লাস শোনা গেল তাদের গলায়৷ মহসিনের অপরাধ, তিনি নাকি শিবাজি ও বাল থ্যাকারে কে নিয়ে "আপত্তিকর" পোস্টে লাইক দিয়েছিন৷ হত্যাকারীদের অধিকাংশই জামিনে মুক্ত৷ কারণ ভারতীয় আদালতের মতে তাঁরা ধর্মীয় প্রেরণায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়৷

সেপ্টেম্বর ২০১৫, দাদরি স্থানীয় মন্দির থেকে ঘোষণা হল মহম্মদ আখলাকের ফ্রিজে গরুর মাংস আছে৷ উন্মত্ত জনতা বাড়ি থেকে টেনে বের করে খুন করল পঞ্চাশোর্ধ আখলাককে৷ খুনিদের গ্রেফতার না করার দাবীতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলল বিজেপি৷ আখলাকের পরিবারের বিরুদ্ধে গোহত্যার মামলা দায়ের করল পুলিস৷ ফ্রিজে রাখা মাংস বিফ না মটন জানতে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হল৷ আর বছরখানেক বাদে খুনিদের একজনের মৃত্যু হলে তার গায়ে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল৷

এপ্রিল ২০১৭, আলোয়াড় রাজস্থানের হাট থেকে গবাদিপশু কিনে ফেরার পথে গোরক্ষকদের হাতে পড়লেন হরিয়ানার দরিদ্র কৃষক পেহলু খান এবং যথারীতি গোরু পাচারের ধুয়ো তুলে তাঁকে হত্যা করল গোরক্ষকরা৷ রাজস্থান সরকার গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পেহলুর পুত্রের বিরুদ্ধেই গোরু পাচারের কেস দিয়ে দিল৷

জুন ২০১৭, প্রতাপগড় স্বচ্ছ ভারত অভিযানের নামে বস্তির মহিলাদের মলত্যাগ করার ফটো তুলছিল মিউনিসিপ্যালিটির কর্মচারীরা৷ সিপিআই (এমএল) লিবারেশান কর্মী এবং রাজস্থানের নির্মাণকর্মী আন্দোলনের সংগঠক জাফর হোসেন প্রতিবাদ করলে "স্বচ্ছ ভারত অভিযান"এ বাধা দেওয়ার জন্য তাঁকে পিটিয়ে মারল পুরকর্মীরা৷

জুন ২০১৭, দিল্লী মথুরা ট্রেন৷ নাহ, ঈদের বাজার করে ঘরে ফেরার সময় জুনায়েদ খানকে মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য আর ফেসবুক লাইক, গোরক্ষা বা স্বচ্ছ ভারতের মত কোন অজুহাতের প্রয়োজন হয়নি৷ টুপি, পায়জামা, পাঞ্জাবীতে প্রতীয়মান ১৫ বছরের যুবকের ধর্মীয় পরিচয়ই তার বেঁচে থাকার অধিকার হারানোর পক্ষে যথেষ্ট কারণ বলে বিবেচিত হয়েছিল সহযাত্রীদের কাছে৷

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, উনা থেকে গিরিডি - দেশজুড়ে আরো অজস্র ঘটনার কথা বলতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে৷ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পরাজয়ে হতাশ দ্বেষভক্তরা উল্লসিত - "ওদের" একটার পর একটা উইকেট পড়ছে যে! হিন্দুধর্মের নামে এইসমস্ত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলেও এসবের জন্য হিন্দুধর্মকে দায়ী করা ঠিক নয়৷ কোটি কোটি সাধারণ হিন্দু আরেসেস-বিজেপি চক্র কে সমর্থন করেন বলেও মনে হয় না৷ কিন্তু বেশী দেরী হওয়ার আগে সাধারণ ধার্মিক হিন্দুরা সোচ্চার হোন গো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে৷ নাহলে চৈতন্য-রামকৃষ্ণদের সরিয়ে গোসন্ত্রাসীরাই হিন্দুধর্মের মুখ হয়ে উঠবেন৷

সংযোজনঃ আগষ্ট ২০১৬, উদুপি৷ গরু কিনে ফেরার পথে ২৯ বছরের ব্যবসায়ী প্রবীণ পুজারি নিহত হলেন "হিন্দু জাগরণ ভেদিকে" সংগঠনের কর্মীদের হাতে৷ ওরা বোধহয় জানত না প্রবীণ কর্ণাটকের কেনজুর গ্রামের বিজেপি সভাপতি ছিলেন৷ গোসন্ত্রাসবাদী দের হাত থেকে হিন্দুরাও রেহাই পাবে না৷ বিজেপি করলেও না৷


ওপরের লেখাটা ফেসবুকে পোস্ট করেছি ২৯শে জুন। তারপরও তালিকাটা বেড়েই চলেছে।

জুন ২০১৭, রামগড় বাজার থেকে মাংস কিনে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন ৫০ বছরের আসগড় আলি ওরফে আলিমুদ্দিন। পথের মধ্যে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আলিমুদ্দিনকে টেনে নামিয়ে তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলে, গাড়িটাও জ্বালিয়ে দেয়। ছুতো সেই একই - আলিমুদ্দিন না কি গাড়িতে করে গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছিলেন! অন্যান্য ঘটনার মত এক্ষেত্রেও ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকারের পুলিস অপরাধীদের গ্রেফতার না করে গাড়িতে রাখা মাংসটা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দিয়েছে।

No comments:

Post a Comment