![]() |
তিস্তা নদী, গাড়ি থেকে তোলা। |
এনজেপি স্টেশনে আমাদের ট্রেন ঠিক সময়েই পৌঁছেছিল। তারপর রিটায়ারিং রুমে একটু হালকা হয়ে যখন সাগরভাইয়ের গাড়িতে উঠলাম তখন সকাল সাড়ে নটা। শিলিগুড়ি শহর পেরিয়ে তিস্তার পাশ দিয়ে পাক খেয়ে খেয়ে পাহাড়ে উঠলাম। ধাপে ধাপে বাড়িঘরগুলো ছোট হয়ে এলো। পুলিস চেকপোস্ট পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিমে ঢুকলাম। তিস্তা ও রঙ্গিতের সঙ্গমস্থলে দাঁড়িয়ে কিছু ছবিটবি তুললাম। সাগরভাই মাঝেমধ্যেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছু জিনিসপত্র তুলছিলেন। আবার সেগুলোকে তাদের গন্তব্যস্থলে নামিয়ে দিচ্ছিলেন। রাস্তার ধারে সুন্দরী নেপালি মহিলাদের হাত নাড়া দেখে বোঝা গেল সাগরভাই এখানে বেশ পপুলার। অনেকটা রাস্তা, সবারই ছোটবাইরে যাওয়ার প্রয়োজন। আমরা ছেলেরা যেকোন জায়গায় কাজ সারতে পারি, কিন্তু সঙ্গে একটা মেয়ে আছে। সাগরভাইকে বলতে তিনি আশ্বস্ত করলেন। খানিকবাদে গাড়ি দাঁড়ালো ঝাঁ চকচকে একটা বিশাল মন্দিরের সামনে। কিন্তু আমাদের তো মন্দির দর্শনের কোন বাসনা ছিল না। সাগরভাই বললেন "অন্দরমে টয়লেট ভি হ্যায়!" আহ! নাস্তিক হিসেবে মন্দিরের উপযোগিতা এই প্রথম উপলব্ধি করলাম। জায়গাটার নাম দরমদিন। ফেরার দিন এই সাগরভাই-ই আমাদের এনজেপি নিয়ে যাবেন। আর আমরা নিজে থেকেই তাঁকে বলব, "ঊও মন্দিরমে থোরা রোক দিজিয়ে না, টয়লেট যানা হ্যায়!"
![]() |
সাগরভাই গাড়ি থামিয়ে একটা দোকান থেকে কিছু কেনাকাটা করছিলেন। সেই ফাঁকে আমরা পা ছাড়িয়ে নিচ্ছিলাম। স্কুলফেরতা এই মেয়েটাকে দেখে পল্লব পটিয়ে ছবি তোলার জন্য রাজি করিয়ে ফেলল। |
হিলে তে যখন পৌঁছলাম তখন ৬টা বাজে। সূর্য ডুবে গেছে, তবু কিছু আলোর আভা রয়েছে। যেখানে গাড়ি থামল তার সামনে জঙ্গল, পরে জেনেছি ওটাই ভার্সে যাওয়ার পথ। বাঁদিকে একটু উঁচুতে সার দিয়ে চারটে কুঁড়েঘর। এগুলোই আপাততঃ আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। আর ডানদিকে নিচে একটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে আর্মির ক্যাম্প বসেছে। আমাদের মধ্যে বব ঘোর দেশপ্রেমিক। ইন্ডিয়ান আর্মি দেখেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে সে ক্যাম্পে দর্শন দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু এক কর্তব্যরত জওয়ান নিষেধ করলেন। আর্মি ক্যাম্পে যাওয়া আর ছবি তোলা দুটোই বারণ। পাঁচটা কুঁড়েঘরের মধ্যে দুটো থাকার জায়গা, দুটো রান্নাঘর। শেষে একটা টয়লেট। ঘরে ১৫-২০ জন লোক স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে। আপাততঃ একটা ঘর আমাদের পাঁচজনের দখলে। ঘরে বসতে না বসতেই ড্রাগন আঁকা সুদৃশ্য চিনামাটির কাপে ধোঁয়া ওঠা অদ্ভুত স্বাদের লিকার চা আর প্লাস্টিকের বাটিতে ম্যাগি চলে এলো। এখানে জলখাবার হিসেবে ম্যাগি বেশ চলে। আসলে যদিও ম্যাগি নয়, ওয়াই ওয়াই।
ট্রেকার্স হাট, হিলে |
![]() |
পাহাড়ে জলখাবারের কমন আইটেম হল ম্যাগি। |
![]() |
হিলেতে সূর্যোদয় |
No comments:
Post a Comment