Tuesday 6 December 2016

সাহারায় শিহরণ

সাইনা এন সি -- ৫ কোটি (১০/৯/১৩ ও ২৪/১/১৪)
সি এম দিল্লী -- ১ কোটি (২৩/৯/১৩)
সি এম মধ্যপ্রদেশ -- ১০ কোটি (২৯/৯/১৩ ও ১/১০/১৩)
সি এম ছত্তিশগড় -- ৪ কোটি (১/১০/১৩)
সি এম গুজরাত -- ১৫.১ কোটি (৩০/১০/১৩ - ২৯/১১/১৩)
আমেদাবাদ মোদিজি - ৩৫.১ কোটি (৩০/১০/১৩ - ২২/২/১৪)
আমেদাবাদ মোদি - ৫ কোটি (২৮/১/১৪)

ওপরের নাম আর সংখ্যাগুলো সুব্রত রায়ের সাহারা গ্রুপের দিল্লীর বিভিন্ন অফিস থেকে উদ্ধার করা কাগজপত্রে পাওয়া গেছে। ২০১৪র নভেম্বরে আয়কর দপ্তর আর সিবিআই এর যৌথ তল্লাশী অভিযানে এই কাগজগুলো উদ্ধার করা হয়েছিল। বন্ধনীর তারিখগুলো নির্দেশ করছে কোন সময়ে ঐ অঙ্কের নগদ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সাহারা গ্রুপের তরফে যারা যারা এই টাকা গুলো পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল তাদের নামও লেখা রয়েছে এই সব কাগজে। সি এম বলতে যদি চিফ মিনিস্টার বোঝায় তবে বলতে হবে দেশের নামজাদা কয়েকজন রাজনীতিককে সাহারা গোষ্ঠী মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েছিল এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এনিয়ে কোনরকম তদন্ত না করে কাগজগুলো আয়কর দপ্তরের হিমঘরে পাঠিয়ে দেয় সিবিআই। সম্প্রতি এই নথিপত্রগুলোর ফটোকপি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এবং আইনজীবি প্রশান্ত ভূষণ বিষয় টা নিয়ে সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট, ভিজিল্যান্স কমিশন ইত্যাদি সংস্থার কাছে চিঠি দেওয়ায় এবং "কমন কজ" একটা এনজিও ভিজিল্যান্স কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে রিট পিটিশনে এই নথিপত্রগুলো দাখিল করায় ব্যাপারটা সামনে এসেছে। "ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি"র তরফ থেকে বিজেপির মহারাষ্ট্র শাখার কোষাধ্যক্ষ সাইনা এন সি, দিল্লীর তদনীন্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী রামন সিং এবং গুজরাতের তদনীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ই-মেইল করা হলে তাঁরা কোন জবাব দেননি। আয়কর দপ্তরের যে আধিকারিক নথিগুলো উদ্ধার করেছিলেন, সেই অঙ্কিতা পাণ্ডে জানিয়েছেন তিনি এখন ছুটিতে আছেন এবং এবিষয়ে কথা বলার এক্তিয়ার তাঁর নেই।

অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ করেছেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদি সাহারা গ্রুপের কাছ থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। কারণ উপরোক্ত নথি থেকে "সিএম গুজরাত", "আমেদাবাদ মোদিজি" এবং "আমেদাবাদ মোদি"কে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ যোগ করলে পাওয়া যায় ৫৫.২ কোটি। এখন ঐ তিনজন একই ব্যক্তি নাও হতে পারে। আমেদাবাদে মোদি পদবিধারী অসংখ্য ব্যক্তি আছেন। এমন কি "সিএম" চিফ মিনিস্টার না হয়ে "Alkalies and Chemicals"ও হতে পারে! ২০১৩ সালের অক্টোবরে সিবিআই আদিত্য বিড়লা গ্রুপের হিন্ডালকো ইন্ডাস্ট্রীজের দিল্লী, সেকেন্দ্রাবাদ, মুম্বাই ও ভুবনেশ্বর অফিসে অনুরূপ তল্লাশি চালায়। সেখানে আদিত্য বিড়লা গ্রুপের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান শুভেন্দু অমিতাভের ল্যাপটপ থেকে একটা রহস্যজনক ই-মেইল উদ্ধার করা হয়। ১৬ই নভেম্বর ২০১২-র ঐ ইমেলে লেখা ছিল "Gujarat CM - 25 cr (12 done - rest?)"। অমিতাভকে এ নিয়ে জেরা করা হলে তিনি জানান, Gujarat CM মানে "Gujarat Alkalies and Chemicals" (Gujrat এর G, Chemicals এর C, Alkalies এর M, সুকুমারের জয় হোক!)। 

একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এই কাগজপত্রগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা? আয়কর দপ্তর বা বিজেপি সরকার কেউই কিন্তু এগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি। প্রধানমন্ত্রী যথারীতি মৌনেন্দ্র অবতার ধারণ করেছেন। দিল্লীর ফরেনসিক ল্যাবোরেটরি উদ্ধার করা নথিগুলোর তলায় আয়কর দপ্তরের অফিসার অঙ্কিতা পাণ্ডের সইকে আসল বলে জানিয়েছে। শোনা যাচ্ছে ব্যাপারটার একটা ব্যাখ্যা সরকার ইতিমধ্যে তৈরী করেছে। সেটা হল, সাহারা গোষ্ঠীর কোন ক্ষুব্ধ কর্মী সুব্রত রায়কে ব্ল্যাকমেল করার জন্য এই জাল নথিগুলো বানিয়েছে। 

জৈন হাওয়ালা কেসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়ে ছিল, কোন সরকারি কর্মকর্তার বেআইনী অর্থপ্রাপ্তির অভিযোগ পাওয়া গেলে তার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। তা কি হবে? ব্যাপম খ্যাত শিবরাজ সিং চৌহান, ললিত মোদিকে পালাতে সাহায্য করা সুষমা স্বরাজ স্বপদে বহাল। সরকারি ব্যাঙ্কগুলো বিজয় মালিয়ার ১২০০ কোটি টাকার লোন উদ্ধার করা যাবে না বলে হাত ধুয়ে ফেলেছে। কেজরিওয়াল যাঁকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রষ্টাচার বিরোধী জিহাদে নেমেছেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নেতা মন্ত্রীদের লাখ লাখ টাকার বাণ্ডিল নেওয়া র ভিডিও নারদ চ্যানেল দেখালেও কেন্দ্রীয় সরকার ওদের টিকি ছোঁয়নি। সারদা কাণ্ডের তদন্তও কার্যত বন্ধ। এই অবস্থায় শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা মেনে "সাহারা পেপার্স" নিয়ে কোন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হবে এ আশা না করাই ভালো। 

Paranjoy Guha Thakurta, Economic and Political WeeklyVol. 51, Issue No. 47, 19 Nov, 2016

No comments:

Post a Comment