চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে টিভি টা চালাতেই সেই মানুষগুলো কে দেখা গেল, মুষ্টিবদ্ধ হাত মাথার ওপর ছুঁড়ে দিয়ে মিছিল করে এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই নন্দিতা মানুষগুলোকে টিভি তে দেখছে। সেও তো চেয়েছিল ঐ হাজারো মুখের মধ্যে একটা মুখ হতে।
গত রবিবার নন্দিতাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীদের পদযাত্রায় যাওয়ার জন্য অনেকবার বলেছিল পৌলমী। কিন্তু তখন তো সাত্যকিকে টিউশনে নিয়ে যাওয়ার সময়। শুভময় কে অবশ্য বলা যেত একটা দিন সাত্যকিকে দিয়ে আসার জন্য। কিন্তু বলা আর হয়ে ওঠেনি।
মিছিলের কন্ঠ টিভি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ঘরে। সেই স্বাধীনতা দিবসের রাতেও “উই ওয়ান্ট জাস্টিস” স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল তাদের মফঃস্বল শহরের প্রাণকেন্দ্র। পৌলমীর পাঠানো ভিডিওতে দেখেছিল নন্দিতা। শুভময়কে যাওয়ার কথা বলতে সে বলেছিল, “যাদের সারাদিন কোনও কাজ নেই তারা রাত দখল টখল করুক। আমরা খেটে রোজগার, ওসব পোষায় না।” টোটো চালায় পাড়ার যে ছেলেটা সে তো বলেই রেখেছে রাতবিরেতে যেকোনও দরকারে ফোন করতে। তবু একা মেয়ে হয়ে কি সে মাঝরাতে টোটো করে বেরোতে পারে!
টিভিতে এখন অন্য একটা জায়গার ছবি, হাতে হাত ধরে মানববন্ধন হচ্ছে। বুধবার শান্তিলতাকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার সময় রাস্তার ধারে অনেক মানুষকে এভাবেই হাতে হাত ধরে দঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল নন্দিতা। ভাবল একবার বলে, চলুন না মা, আমরাও একটু ওদের সাথে গিয়ে দাঁড়াই। তার আগেই শান্তিলতা বললেন, “এই এখন এক হুজুগ উঠেছে। এত প্রতিবাদ করে হবে টা কী?” আর কিছু বলা হল না।
মোবাইলের পিং শব্দে চিন্তা ছিঁড়ে গেল। পৌলমী মেসেজ করেছেঃ “সন্ধ্যা সাতটায় চিকিৎসকদের লড়াইএ সংহতি জানিয়ে দশ মিনিট আলো বন্ধ রাখুন।“ ঘড়িতে ছটা আটান্ন। নিজের ঘরের আর বারান্দার আলো নিভিয়ে দিল নন্দিতা। সুখময় ভেতর থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন, “আলো নিভে গেল কেন বৌমা? ল্যাম্পটা খারাপ হল নাকি?” সুখময় কানে ভালো শোনেন না। কাছে গিয়ে ল্যাম্প খারাপ হওয়ার কথাই বলবে বলে সুখময়দের ঘরে ঢুকল নন্দিতা। কিন্তু ল্যাম্প নয়, নন্দিতার গলাটাই বোধয় বিগড়ে গিয়ে আওয়াজ বেরলোঃ “মেয়েটাকে যারা বিচ্ছিরিভাবে মারল তাদের শাস্তি চেয়ে সবাই আলো বন্ধ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছি বাবা।“
সহজিয়া ঈদ সংখ্যা ২০২৫ এ প্রকাশিত
No comments:
Post a Comment